শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৪০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
তৈমূরকে শামীম ওসমানের প্রার্থী বললেন আইভী

তৈমূরকে শামীম ওসমানের প্রার্থী বললেন আইভী

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র তৈমূর আলম খন্দকারের একে অপরের প্রতি ছোড়া নানা অভিযোগ-অনুযোগে জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। আইভী দাবি করেছেন ওসমান পরিবারের প্রার্থী হয়ে ভোটে নেমেছেন তৈমূর আলম। এমন অভিযোগকে গা না করে তৈমূর বলছেন- নারায়ণগঞ্জের ভোটার হলে প্রধানমন্ত্রীও আমাকে ভোট দিতেন। এদিকে নৌকার পক্ষে কাজ না করায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে এ কমিটি।

নগরীর বন্দরে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল শনিবার নিজের প্রচারণাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আমি আগে বলিনি, তা আজকে স্পষ্টভাবে বলতে চাইছি তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির প্রার্থী না, জনগণের প্রার্থী না; উনি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী। শামীম ওসমান তাকে প্রার্থী করেছেন। তিনি জনতার প্রার্থী না, বিএনপির প্রার্থী না। এখানে ধানের শীষ নেই। শামীম ওসমানের প্রার্থী। আমি এতদিন বলেছি, আমি একটি দল করি। আমি দলের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য কাজ করেছি। সুতরাং জনস্রোত আমার সঙ্গে থাকবে। জনতাই আমার শক্তি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি উনার (শামীম ওসমান) সঙ্গে নির্বাচন করেছি ২০১১ সালে। ২০১৬-তে উনি সাখাওয়াতকে (বিএনপি প্রার্থী) সাপোর্ট দিয়েছেন, আমাকে দেননি। উনি নৌকার বিরুদ্ধে ধানের শীষে সিল মেরেছেন। উনি ১৯৯৬-তে নাজমা রহমানের নৌকা কেড়ে নিয়েছেন। ভোটবাক্স ছিনতাই করেছেন। তার ভাই লাঙলের পক্ষে। কীসের আওয়ামী লীগ করে? কেমন আওয়ামী লীগ করে? যে লাঙলের হয়ে তার ভাইয়ের জন্য নৌকার ব্যালটবাক্স ছিনতাই করে! উনি সুবিধাবাদী।’ আইভী আরও বলেন, ‘অপশক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে গডফাদার ও সন্ত্রাসীরা। আসুন যেভাবে আমরা শক্ত হাতে দমন করেছি, ঠিক সেভাবেই এই দন্তবিহীন বাঘকে শক্ত হাতে দমন করি। আমরা হাতিকেও দমন করতে চাই, সন্ত্রাসীকে দমন করতে চাই। ভালো মানুষকে লালন করতে চাই। আমার পাশে আসুন। আমাকে ভোট করুন, সাপোর্ট করুন। আমরা শান্তিময় সবুজ সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়ি একসঙ্গে।’

সিদ্ধিরগঞ্জে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালকুড়ি এলাকায় গতকাল সকালে গণসংযোগে এসে তৈমূর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি নারায়ণগঞ্জের ভোটার হতেন, আমি তার কাছেও ভোট চাইতাম এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস তিনি আমাকে ভোট দিতেন। তিনি ২০১৮ সালে বলেছিলেন- তৈমূর আলম খন্দকার জেতার মতো লোক। দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীও আমাকে ভোট দিতেন বলেই আমি বিশ^াস করি। মানুষ যখন একটা প্রার্থী খুঁজে বেড়াচ্ছিল, তখনই জনমানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি প্রার্থী হই।’ শামীম ওসমান ও আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তো আওয়ামী লীগের ভোটও চাই। প্রধানমন্ত্রীরও সমর্থন চাই। যাদের নাম আপনারা বলছেন, তারাও তো শহরের ভোটার, তারা জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন, আমি তো তাদেরও ভোট ও সমর্থন চাই।’ তৈমূর আলম বলেন, ‘যখন শামীম ওসমান তোলারাম কলেজের ভিপি ও ছাত্রনেতা ছিল, তখন আমি নারায়ণগঞ্জে একজন ডার্কসাইটে শ্রমিক নেতা ছিলাম। আমি শামীমের পায়ে হাঁটি না। আমি নিজস্ব জনশক্তিতে হাঁটি।’ তিনি শামীম ওসমানের ক্যান্ডিডেটÑ আইভীর এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তৈমূর বলেন, ‘তাকে (আইভী) নাকি কেউ সাপোর্ট দেয় না, এখানে আমি কী করব? তাদের এমপি, দলের নেতাকর্মীরা যদি তাকে সাপোর্ট না দেয়, সেখানে তো আমার করার কিছু নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন থেকে অনেক আলাদা। আমি প্রশাসনের ওপর কখনো নির্ভর করিনি, কখনো করব না। বিআরটিসিতে থাকার সময় কারও ওপর নির্ভর করিনি। নিজের টেলিফোন নম্বর সব জায়গা দিয়ে রেখেছিলাম। এতে আমি মনে করি, আমার কাজটা সুন্দর হয়েছে। আমি আজকে থেকে রাস্তা ঝাড়ু দিই না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা ঝাড়ু দিই। এটি আমার জন্য কোনো সমস্যা না।’ স্বতন্ত্র এ প্রার্থী বলেন, ‘আমি জনগণের প্রার্থী। জনগণের চাহিদার কারণেই আমাকে প্রার্থী হতে হয়েছে। পৌরসভার ও সিটি করপোরেশন ১৮ বছর ধরে এক ব্যক্তির হাতে। এতে ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট শক্ত হয়েছে; কিন্তু নগরবাসীর সেবা বৃদ্ধি পায়নি। ফলে নগরবাসী এখন ঐক্যবদ্ধ। এখানে একেকজন একেক দল করে। কিন্তু ডান-বাম সবাই আমার পাশে। নারায়ণগঞ্জের নাগরিকদের জিম্মাদারি কার কাছে হেফাজতে থাকবে, এটি দেখার দায়িত্বও তাদের। সে হিসাবে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি বিএনপি কী বিএনপি না এটি নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করেন। আমাকে বিএনপি বহিষ্কার করেনি। তারা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে সব দলের সমর্থন যেন পাই। আমি উড়ে এসে জুড়ে বসিনি। আমার জন্ম রাজপথে। আমি চাই আমার মৃত্যুটাও যেন রাজপথেই হয়।’ তৈমূর আরও বলেন, ‘আমি নিজে একজন স্পোর্টসম্যান। আমি সাভার আর্মি গলফ ক্লাবের সদস্য। রাইফেল ক্লাবে খবর নিয়ে দেখবেন, আমি বেস্ট শুটার ছিলাম। সুপ্রিমকোর্টে আমি তিনবার ব্যাটমিন্টন চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। খেলাধুলার প্রতি ছোটবেলা থেকেই আমার ঝোঁক। সে হিসাবে আমি মনে করি, কিশোর গ্যাংয়ের জন্য দায়ী সমাজ ও স্থানীয় সরকার। তাদের দায়িত্ব মানুষের কাছে বিকল্প তুলে দেওয়া। আমি সিটি করপোরেশনকে আমার সন্তানের মতো চালাব।’

এদিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে গত শুক্রবার তৈমূর আলমের গণসংযোগে জাতীয় পার্টি সমর্থিত সদ্য নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এসএম আকরাম। বিষয়টি শহরজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। অনেকেই মনে করছেন-এতদিন তৈমূর আলমকে ভেতরে ভেতরে যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ওসমান পরিবার, তারই বহিঃপ্রকাশ হলো বন্দরের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তৈমূরের গণসংযোগে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে। আবার অনেকেই মনে করছেন শুধু নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগেই নয়, এমন মতবিরোধ আছে বিএনপির মধ্যেও। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাকে তৈমূরের গণসংযোগে দেখা যায়নি এখনো। এমনকি বিএনপিসমর্থিত অনেক কাউন্সিলরও তৈমূরের গণসংযোগে আসেননি নিজ নিজ ওয়ার্ডে। উল্টো বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সাদরিলকে দেখা যায় আইভীর প্রচারণায়। গত ২ জানুয়ারি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ওই ওয়ার্ডে গণসংযোগে গেলে তার সঙ্গে ছিলেন সাদরিল। এ ছাড়া নাসিক ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেনকেও আইভীর গণসংযোগে দেখা গেছে।

মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত : নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার এ কথা জানানো হয়। সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান মহানগর কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। তারা ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবেই পরিচিত। তাই নারায়ণগঞ্জ সিটি (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দিলেও তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নামেননি বলে অভিযোগ।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য বলা হয়, কেন্দ্রীয় সংসদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ মে বিলুপ্ত এ কমিটিতে হাবিবুর রহমান রিয়াদকে সভাপতি এবং হাসনাত রহমান বিন্দুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877